জানুয়ারী – ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ

জানুয়ারী – ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ

১। ০৬ জানুয়ারী ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ প্রেরিতগণের রাণী মারীয়ার সঙ্গীনি সংঘে অত্যন্ত ঘটা করে মহা সমারোহে ৪ জন ভগিনীর রজত জয়ন্তী ও ১ জন ভগিনীর চিরব্রতের অনুষ্ঠান মাতৃগৃহে অনুষ্ঠিত হয়। মহামান্য আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুশ এতে উপস্থিত হয়ে এই মহতী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এই দিনে অনেক ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার , আত্মীয় সজন এবং আমাদেও ভগ্নীগণ উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের আনন্দকে শতগুণে বাড়িয়ে তুলেন। তবে সিস্টার মারীষ্টেল্লা অসুস্থতার কারণে ও সিস্টার মেরী ষ্টেল্লা ইটালী থেকে করোনার কারণে দেশে আসতে না পারার কারণে এই রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহ।

২। ৭ জানুয়ারী ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ মেরী হাউজে রজত জুবিলী পালনকারী সিস্টারগণ (সিস্টারস চামেলী, অর্পা,লিউবা ও পিউস্), শেষব্রত প্রাপ্ত সিস্টার মেরী রোজারিয়া এবং প্রথম ব্রত গ্রহণকারী- সিস্টার মেরী শিশিলিয়া আসেন। দুপুরে খাবার পূর্বে সিস্টারদেরকে গান গেয়ে, জলন্ত প্রদীপ ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন জানানো হয়। দুপুরে খাবার পর সিস্টারগণ মাদার হাউজে ফিরে যান। একই দিনে সিস্টার মেরী শিশিলিয়া বাংলা বিষয়ে অনার্স পড়াশুনার উদ্দেশে মাতৃগৃহ হতে বদলী হয়ে মেরী হাউজে আসেন।

৩। ১০ জানুয়ারী ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

এ বৎসর ৬ জানুয়ারী তারিখে যারা মেরী হাউজ থেকে বদল হয়েছেন তারা হলেনÑ সিস্টারস্ রোজমেরী-কুমিল্লা, সুদীপ্তা-বনপাড়া, এনিটা- রোয়ান ছড়ি ও সান্তনী- সিলেট। তারা নতুন মনও উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে নতুন আশ্রমের দায়িত্ব পালনে যাবেন। তাই তাদের মঙ্গল কামনায় সন্ধ্যায় বিশেষ প্রার্থনা, গান ও জলন্ত প্রদীপ দিয়ে মেরী হাউজ পরিবারের পক্ষ থেকে সিস্টারদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

৪। ১২ জানুয়ারী ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

সিস্টার মেরী শাওলী বাড়ি থেকে বিবিএ পাশ করে আমাদের এই ধর্ম সংঘে যোগদান করেন ২০১৬ খ্রিস্টবর্ষে৯ সেপ্টেম্বর ।২০১৭ খ্রি: ৩০ এপ্রিল তিনি নব্যালয়ে প্রবেশ করেন এবং ১০১৯ খ্রি: ৮ ডিসেম্বও তিনি ১ম ব্রত করে ২০২০ খ্রিষ্টবর্ষের জানুয়ারী মাস থেকে নটরডেম বিশ^^বিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াশুনা শুরু করেন। তিনি বরাবরই তার প্রতিটি পরীক্ষাতেই খুব ভাল ফলাফল লাভ করেন। আজ তার এমবিএ ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল বের হয়, তিনি অত্যন্ত চমৎকার রেজাল্ট করেন। বর্তমানে তিনি কাওরান বাজারে ওয়ান ব্যাংকে ইন্টার্ণশীপ শুরু করেন। জানা গেছে যে এর পর তিনি সেন্ট মেরীস স্কুল এবং কলেজে শিক্ষকতা করবেন। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।

৫। ১৪ জানুয়ারী ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

এই বৎসর প্রথম মন্ত্রিনী মিটিং শুরু হয়। এদিনে সন্ধ্যায় শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল বিশেষ পবিত্র ঘন্টা পরিচালনা করেন। তিনি বিগত একটি বছরের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান এবং নতুন বছরের জন্য ঈশ^রের বিশেষ আর্শীবাদ যাচ্না করেন।

৬। ১৫ জানুয়ারী ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

সিস্টার মেরী সুদীপ্তা তার নতুন দায়িত্ব নিয়ে নতুন কর্মক্ষেত্র বনপাড়া আশ্রমে চলে যান। এই একই দিনে সিস্টারস্ রোজী, মুক্তি, জুরিকা সাভার ইঈজসেন্টারে ঊহমষরংয- কোর্সে যান। এদিকে নভেম্বর হতে জানুয়ারী পর্যন্ত সিস্টারস বেনেডিক্টা, চন্দ্রা, যোসেফিন ও সান্তনী ফার্মগেটে এক বিশেষ স্পোকেন ইংলীশ কোস সমাপ্ত করেন এবং তারা তিন জনই ভাল রেজাল্ট করেন।

৭। ১১ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেলের পর্ব উপলক্ষ্যে অনেক ভগ্নিগণ মেরী হাউজে আসেন। যেহেতু পরের দিন থেকে কর্ত্রী মিটিং তাই প্রায় সব আশ্রমের কর্ত্রীগণ ও আশ্রম মন্ত্রীনিগণ উপস্থিত হন। ১১ ফেব্রুয়ারী লুর্দের রাণী মায়ের পর্ব দিনে শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেলের পর্ব মেরী হাউজে খুবই ঘটা করে করা হয়। প্রস্তুতিও খুবই ভাল ছিল। বিশেষভাবে সিস্টারের উদ্দেশ্যে তিনদিন পূর্ব হতেই দলে দলে ত্রি-দিবসীক প্রার্থনা করেন মেরী হাউজের ভগ্নীগণ। অতপর, পর্বেও পূর্ব সন্ধ্যায় বিশেষ পবিত্র ঘন্টার পর ভিজিল উৎসব হয়।পরদিন সিস্টাররের সার্বিক কল্যাণ কামনা করে পর্বীয় খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার শিমন প্যাট্রিক গমেজ। দুপুরের প্রীতিভোজে প্যারিশের ফাদারগণ উপস্থিত ছিলেন। সব কিছুই ছিল খুবই চমৎকার। সিস্টার জেনারেল তার পর্বদিনে খুবই খুশী হয়েছেন।

৮। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

সিস্টার মেরী অন্বেষা সিলেট থেকে বদলী হয়ে আজ দুপুরে মেরী হাউজে এসেছে। উল্লেখ্য যে তিনি সেখানে দু’বৎসর সিস্টার গ্লোরিয়ার সঙ্গে খুব সুন্দর ভাবে সেবাকাজ করেছেন এবং সেখানে থেকে তিনি বিএ বিএড পরীক্ষাও লিখেছেন। এখন তিনি মেরী হাউজে থাকবেন এবং কাফরুল স্কুলে সিস্টার মেরী জয়ার সাথে শিক্ষকতার কাজ করবেন ।

৯। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ আশ্রম অভিজ্ঞতার জন্য ২য় বর্ষের এস্পাইরেন্ট এবং তাদের পরিচালিকা সিস্টার মেরী চন্দ্রা মাদার হাউজে যান। সেই সাথে সিস্টার মেরী ছবিকেও চিকিৎসা শেষ হলে পর মাদার হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। সিস্টারস্ চন্দ্রা, জলি, অমিয়া আবার ঐ দিনেই মাতৃগৃহ থেকে মেরী হাউজে ফিওে আসেন।
১০। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ  :

আজ সিস্টার ফ্রান্সিকা থেকে শুরু করে সিস্টার মারীষ্টেল্লা পর্যন্ত যারা আছে তারা বাৎসরিক সেমিনার করার জন্য মেরী হাউজে এসেছেন। এদের সংখ্যা ছিল মোট ৪১ জন। পরদিন শ্রদ্ধেয় ফাদার তপন রোজারিও পোপ ফ্রান্সিসের “ফ্রাতেল্লি তুত্তি”Ñ আমরা সবাই ভাই এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সকাল ৯:০০- ১:৩০ মিনিট পর্যন্ত ক্লাশ নেন। বিকালের ক্লাশ পরিচালনা করেন শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারের।

একই দিনে যারা ইংরেজি কোর্স করার জন্য সাভার বি.সি.আর সেন্টারে গিয়েছিল তারাও কোর্স শেষ করে আজ বিকালে মেরী হাউজে ফিরে এসেছেন। এই বিশেষ স্পোকেন ইংলীশ প্রশিক্ষণ কোর্সে যারা অংশ নিয়ে ছিলেন সেই ভগ্নীগণ হলেনÑ সিস্টারস্ নোয়েল, নয়মী, রোজী, আল্পনা, মুক্তি ও জুরিকা। কোর্স সমাপ্ত হলে পর মেরী হাউজ থেকে সিস্টার মেরী জয়া সাভার গিয়েছিলেন তাদেরকে আনার জন্য। সন্ধ্যায় প্রশিক্ষনার্থী ভগ্নীগন ইংরেজী ভাসা ব্যাবহার করে সংঘ থেকে এই সুযোগ লাভের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এতে তারা ছয় জনই অংশ নিয়েছিলেন। ভগ্নীগন বেশ ভালই শিক্ষা লাভ করেছেন।

১১। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

বাৎসরিক সেমিনারে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে যারা যাওয়ার বাকী ছিল সবাই চলে যান নিজ নিজ গন্তব্য স্থানে। এই দিনে প্রায়শ্চিত্তকালের উপর বিশেষ উপদেশ দান করেন বনানী থেকে আগত শ্রদ্ধেয় ফাদার টেরেন্স রড্রিক্স। তিনি সন্ধ্যা ৬-৭ টা পর্যন্ত সহভাগিতা করেন।

১২। ০৩ মার্চ ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ সকালে মেরী হাউজের সাময়িক ব্রত গ্রহণকারী সিস্টারগণ পাগাড় যান তাদের জুনিয়র পরিচালিকা সিস্টার মেরী অনিন্দিতার কাছে। সেখানে তারা সারাদিন আনন্দ করে দিন শেষে বিকালে সবাই আবার মেরী হাউজে ফিরে আসে।

১৩। ০৫ মার্চ ২০২১ ক্রিস্টবর্ষ  :

আজ আমাদের সংঘের জন্মদিন। তাই সকালে খ্রিস্টযাগের পর যে শুভেচ্ছা জানানোর রীতি আছে প্রায়শ্চিত্তকাল ও সেমিনার থাকায় আগের দিন অর্থাৎ ৪ মার্চ সন্ধ্যায় বিশেষ প্রার্থনা ও শুভেচ্ছা বিনিময় বরা হয় গান ও মালার মধ্য দিয়ে। সেমিনারে এ বছরের মুলসুর আমরা সবাই ভাইবোন- এর উপর সহভাগিতা করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার তপন রোজারিও।

১৪। ১০ মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এ সিস্টার মেরী অন্বেষার করোনা পজেটিভ ধরা পরে। তিনি বিএড পরীক্ষার কারণে সিলেট গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে আসার পর তার এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি মেরী হাউজেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। মেরী হাউজে আমাদের নার্স ভগিনী সিস্টার এলিজার নিপুন সেবা পেয়ে খুব শীঘ্রই তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। কিন্তু এর পর পরই তার জড়ায়ুতে একটি বড় অপারেশন হয়। বেশ কিছুদিন বিশ্রাম করার পর তিনি এখন অনেকটাই ভাল আছেন। আমরা আমাদের এই ভগিনীর জন্য ঈশ^রকে ধন্যবাদ জানাই।

১৫। ১৬ মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ সিস্টার মেরী জেনেট ৪ বৎসর পর ইটালী থেকে মেরী হাউজে আসেন। তিনি নিরাপদেই আমাদের মাঝে এসে পৌঁছেছেন বলে আমরা সবাই খুশী এবং ঈশ^রকে ধন্যবাদ জানাই। সিস্টারস্ লিলি ও মিতালী সিস্টার জেনেটকে এয়ারপোর্ট হতে রিসিভ করার জন্য যান । তিনি মেরী হাউজে থেকে বাড়িতে ও অন্যান্য আশ্রমে দেখা সাক্ষাৎ করেন।

১৬। ০৪ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ পাস্কা পর্ব উপলক্ষ্যে সকাল ১০ ঘটিকায় বটমলী হোমের সিস্টারগণ মেরী হাউজে টিফিন করেনÑ দই, চিড়া, মুড়ি, আরও কত কি! দুপুরে কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও আমাদের সাথে আহার করেন, বিকালে আমরা সবাই মেরী হাউজ থেকে বটমলীতে যাই, টিফিন করি একসাথে। অতপর হোমের মেয়েদের সাথে আনন্দ করি এবং রাতে ইস্টার উপলক্ষ্যে পরম শ্রদ্ধেয় আর্চবিশপ এবং প্যারিসের ফাদারগণ আমাদের সাথে নৈশ ভোজে অংশ গ্রহণ করেন। এই দিনে আমরা প্রত্যেকেই নির্মল আনন্দ উপভোগ করি।

১৭। ০৫ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আমরা গত বৎসর করোনার কারণে পুণ্য সপ্তাহের অনুষ্ঠান তথা ইস্টার বলতে কিছুই করতে পারি নাই। ঈশ^রের দয়ায় এবার তা করতে পেরেছি। ইস্টারের পর দিন থেকে এবার লক ডাউন। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এর আবির্ভাব এর ফলে দেশে অনেক লোক আক্রান্ত হতে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যুর হার বাড়ছে দেখে এ বৎসর এই প্রথমবার ৫- ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে লক ডাউন শুরু হয়। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকার সবাইকে ঘরে থাকার জন্য বিনিত অনুরোধ করেন। যেন এই মহামারি ছড়াতে না পার্ েএবং যেন আমরা সবাই সুরক্ষা পাই।

১৮। ০৮ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ ৮ এপ্রিল ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ। মেরী হাউজ পরিবারে শ্রদ্ধেয়া সিস্টার মেরী মিনতি, এসএমআরএ, সুপিরিওর জেনারেলের ৬০ তম শুভ জন্মদিন পালন করা হয় অত্যন্ত ঘটা করে। জন্মদিনের পূর্ব সন্ধ্যায় বিশেষ পবিত্র ঘন্টা হয় এবং এর পর শুরু হয় ভিজিল উৎসব। এক আনন্দঘন, মনোরম পরিবেশে এই ভিজিল উৎসব করা হয় চ্যাপিলের বারান্দায়। শেষে সিস্টারকে মিষ্টি মুখ করান শ্রদ্ধেয়া সিস্টার লিলিয়ান, এসএমআরএ। অত:পর সিস্টারের শুভ জন্মদিনে প্রথমেই ছিল প্রাত:কালীন প্রার্থনা ও ধ্যান। এরপর বিশেষ খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার মিল্টন কোড়াইয়া। তিনি সিস্টারের সার্বিক কল্যাণে এই খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন। তিনি উপদেশে সিস্টারের গুণাবলী নিয়ে সুন্দর ধ্যান দিয়েছেন।

খ্রিস্টযাগের পর পর শুভেচ্ছাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান হয়। জন্মদিনে শ্রদ্ধেয়া সিস্টারকে শুভেচ্ছা গান, নাচ, মাল্য দান, উপহার প্রদান, কার্ড প্রদান করেন আমাদেরই ভগ্নিগণ। বটমলী হোম অর্ফানেজের ভগ্নিগণও এ আনন্দে অংশগ্রহণ করেন। ভগ্নিদের আন্তরিকতা ও ভালবাসা দেখে শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল সত্যিই অনেক খুশী হন। শেষে তিনি তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তা প্রকাশ করেন। এই বিশেষ দিনকে ঘিরে আমাদের ভগ্নিগণ নানারূপ মুখরোচক খাবার রান্না করেন ও সবাই দুপুরের জন্মদিনের ভোজে অংশ গ্রহণ করেন। সত্যিই দিনটি আমাদের সবারই জন্য ছিল অনেক আনন্দের। শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেলকে ঘিরেই আমাদের সবার এই আনন্দ। এই দিনে আমরা সবাই সিস্টারের সার্বিক মঙ্গল কামনা করি। ঈশ^র তাকে দীর্ঘজিবি করুন।

১৯। ১০ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজকের এই দিনটিকে আমরা বিশেষভাবে স্মরণে রাখতে চাই এই কারণে যে আজ আমাদের সেন্ট মেরীস হোস্টেলে ( হোন্ডাগলী, তেঁজকোনী পাড়া, ঢাকা) সাক্রামেন্ত অর্থাৎ টাবার্নিকেল স্থাপন করা হয়। হোষ্টেল পরিচালিকা শ্রদ্ধয়া সিস্টার মেরী দীপ্তি বলেন যে পরবর্তীতে বিল্ডিং উপর দিকে বাড়ালে অর্থাৎ ৫-৬ তলা ভবন করতে পারলে আলাদা করে আর একটু বড় করে চ্যাপিল তৈরি করার পরিকল্পনা সংঘের রয়েছে। কিন্তু আপাতত ভগ্নীদের প্রার্থনার সুবিধার্থে নীচে একটি ছোট রোম চ্যাপিল হিসাবে ব্যাবহার করার জন্য ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে এবং আজ এই নূতন চ্যাপিলে ট্যাবার্ণীক্যাল স্থাপন করা হয়েছে।

এ উদ্দেশ্যে মেরী হাউজ থেকে ভগ্নীগণ যথা সময়ে হোস্টেলে যান এবং দুপুর ১২:০০ তেঁজগাও প্যারিশের পালপুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার সুব্রত বোনিফাস গমেজের পরিচালনায় বিশেষ খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করা হয় এবং শেষে তিনি চ্যাপিলে ট্যাবার্ণীক্যালে সাক্রামেন্ত রাখেন। এর পর পবিত্র জল দিয়ে তা পবিত্র করা হয়। তাকে সহায়তা করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার ঝলক আন্তুনী দেসাই। এই দিনে উপস্থিত ছিলেন সিস্টার মেরী মিনতি, এসএমআরএ, সুপিরিয়র জেনারেল, সহকারী সংঘ পরিচালিকা সিস্টার মেরী শিখা, মন্ত্রিণী ভগ্নীগণ শ্রদ্ধেয় সিস্টার দীপ্তি ও লিলি।

বর্তমানে এই হোস্টেল পরিচালনার দায়িত্বে সিস্টার দীপ্তিকে সহায়তা করছেন সিস্টার মেরী হিমা। সব শেষে আমরা সবাই সেখানে দুপুরের প্রীতি ভোজে অংশগ্রহণ করি। শ্রদ্ধেয় বড় ফাদার এই বিশেষ দিনের আনন্দকে ধরে রাখার জন্য বিশেষ ভাবে এই সাধু যোসেফের বর্ষে তিনি এই চ্যাপিলের জন্য একটি সাধু যোসেফের মূর্তিও আমাদেরকে উপহার দেন এবং সিস্টার জেনারেল দেন একটি মা মারীয়ার মূর্তি। এই সবই ঐ দিনে আশীর্বাদ করা হয় ও চ্যাপিলে প্রার্থনা ও ভক্তিভাব বাড়ানোর জন্য স্থাপন করা হয়। উল্লেখযোগ্য যে চ্যাপলের ট্যাবার্ণীক্যালটি দান করেন ফাদার শ্যানেলের ভাই। আমরা এই সব উদার দাতাদেও প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদেও প্রতিদিনকার প্রার্থনায় তাদেরকে স্মরণ রাখবো। তাদের মঙ্গল প্রার্থনা করবো।

২০। ১৩ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 মেরী হাউজে প্রথম দলের বার্ষিক নির্জন শুরু হয়। ১৩- ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই নির্জন ধ্যান পরিচালনা করছেন পরম শ্রদ্ধেয় কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, সিসএসসি। এতে অংশ গ্রহণ কারী ছিল ৫০ জন। দেশের বাস্তব পরিস্থিতির কারণে (করোনা ভাইরাস, লক ডাউন ইত্যাদি) ভগ্নীগণ কয়েকজন আসতে পারেনি। ১ম দলে নির্জনে অংশগ্রহণকারীর মোট সংখ্যা ৪৬ জন । কার্ডিনাল মহোদয় ধন্য বাণী/ অষ্ট- কল্যাণ বাণীর উপর প্রস্তুতি নিয়ে খুব সুন্দরভাবে এই নির্জন ধ্যান পরিচালনা করেন। তিনি এই অষ্ট কল্যান বাণীকে স্বর্গে যাবার সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করেন। এই জগতে পবিত্রতা লাবের জন্য এই আটটি পথকে তিনে বেছে নেবার কথা বলেন। তিনি বলেন এই ধন্য বাণী আমরা যেন সবাই মুখস্ত করি এবং এই বাণী অনুসারে জীবন যাপন করে একদিন যেন ধন্য হতে পারি স্বর্গ সুখ লাভ করতে পারি।

২১। ১৪ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 ১৪- ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে পুনরায় লক ডাউন শুরু হয়। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বাড়তেই থাকে। প্রতিদিন ৪০/ ৫০/ ৯৪ পর্যন্ত মানুষ মারা যাচ্ছে দেখে সরকার সারা দেশে ২য় বারের জন্য কঠোর লক ডাউন রাখেন। অনেক মানুষ এ সময়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়।

২২। ১৫ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ ১৫ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ, সকাল ০৯: ১৫ মিনিটে সিস্টার মেরী আনন্দ, এসএমআরএ স্বর্গবাসী হন। সিস্টার মেরী আনন্দ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী নিম্নে তুলে ধরছিÑ ১৯৪১ খ্রিস্টবর্ষে ১৮ জানুয়ারী সিস্টার মেরী আনন্দ, এসএমআরএ রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর অন্তর্গত, রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের স্বর্গীয় মনাই আন্তুনী কস্তা ও স্বর্গীয়া ম্যাগডেলীন কস্তার কোল আলো করে পৃথিবীর বুকে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বাপ্তিস্ম পান ১৯৪১ খ্রিস্টবর্ষের ২২ জানুয়ারী, রাঙ্গামাটিয়া মিশনে। সিস্টারের বাপ্তিস্মের নাম মেরী বার্ণাডেট সুনীতি কস্তা। তিনি ১৯৫৯ খ্রি. ৬ জুলাই সিস্টার হওয়ার উদ্দেশ্যে এসএমআরএ একটি দেশীয় ধর্মসংঘে প্রবেশ করেন। ১৯৬০ খ্রি. ৬ জানুয়ারী তিনি ধর্মীয় পোষাক পান। ১৯৬২ খ্রি. ৬ জানুয়ারী তিনি প্রথম ব্রত এবং ১৯৬৮ খ্রি. ৬ জানুয়ারী তিনি আজীবনের জন্য ব্রত গ্রহণ করেন।

সিস্টার মেরী আনন্দ একজন আদর্শ শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি নব্যালয় থেকে শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি তুমিলিয়া, পানজোরা, মারীয়ামনগর, মঠবাড়ি,পানজোরা, তেঁজগাও, বটমলী হোম অর্ফানেজ, তুমিলিয়া, মঠবাড়ি, মেরী হাউজ, চড়াখোলা, শোলপুর ও লক্ষ্মীপুর, সিলেট এইসব জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করেন। তাছাড়া তিনি কমলাপুর বুড্ডিস স্কুলেও শিক্ষাসেবা দান করেন আনন্দ চিত্তে। আমরা দেখি যে তিনি তার জীবনের বেশীর ভাগ সময়ই বিভিন্ন প্রাইমারী স্কুলে ছোট ছোট শিশুদের মাঝে শিক্ষাদানের কাজেই রত ছিলেন বেশী এবং এভাবেই তিনি শিক্ষা জগতে এই ছোট ছেলেমেয়েদের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

ব্যক্তি জীবনে সিস্টার আনন্দ একজন অত্যন্ত আনন্দ প্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি ছোট ছোট শিশুদের অতি যত্ন সহকারে বিভিন্ন সাক্রামেন্তের জন্য প্রস্তুত করেছেন। অনেকের হৃদয়ে তিনি ব্রতীয় জীবনে ও যাজকীয় জীবনে আহ্বানের বীজ বপন করেছেন। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সাথে, পরিচিতদের সাথে তিনি সবসময় যোগাযোগ রেখেছেন এবং তাদের খোঁজখবর তিনি নিয়েছেন। সময় পেলেই তিনি নিজ বাড়িতে যেতেন এবং সকল আত্মীয় পরিজনদের সাথে গ্রামের পরিচিতজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতেন।

বাগান করা, গান-বাজনা করা, বিভিন্ন অভিনয় করা ছির সিস্টারের প্রিয় সখ। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সিস্টারের অবদান অতুলনীয়। ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যেমন নাটক, কমিক, নাচ-গান শিখিয়েছেন, করিয়েছেন তেমনি সংঘ জীবনেও যে কোন অনুষ্ঠানে সিস্টারের অংশগ্রহণ ছিল। রাতে খাবারের পর রেক্রিয়েশনের সময়ও গান গেয়ে আন্যদেরকে আনন্দ দান করতেন। তিনি একজন প্রার্থনাশীল মানুষও ছিলেন। প্রতিদিন তিনি যথাসময়ে প্রার্থনায় উপস্থিত হতেন এবং ব্যক্তিগত প্রার্থনায়ও তিনি অনেক সময় দিতেন।

আজ ১৫ এপ্রিল সকাল ৯:১৫ মিনিটে তিনি ৮০বৎসর ৩ মাস বয়সে মাতৃগৃহের শান্তিভবনে থেকে স্বর্গীয় পিতার কোলে স্থান করে রিয়েছেন। আমরা তার বিদেহী আত্মার চির কল্যাণ কামনা করি।

২৩। ২২ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 দেশের সরকার প্রধান আজ সন্ধ্যা থেকে ৩য় বারের মত (২২ এপ্রিল-২৮ এপ্রিল পর্যন্ত) আরও এক সপ্তাহের জন্য কড়া লক ডাউন দেন । কারণ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তেই থাকছে। ফলে বাংলাদেশে এই করোনার কারণে দিনে সর্বোচ্চ ১১২ জন মানুষ মারা যাচ্ছে । এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণেই সরকারের এই তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ। এ সময়ে দোকান-পাট, মলগুলি সহ সকল প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকে। বাঁচার জন্য মানুষ একপ্রকার বাধ্য হয়েই গৃহ বন্দী হয়ে পড়ে।

জন জীবন অত্যন্ত দুর্বিসহ হয়। বিশেষভাবে যারা দিন মজুর, অসহায়, দরিদ্র তারা খুবই কষ্ট পান অনাহারে, অর্ধাহারে। স্কুল কলেজ কিছুই খুলতে পারেনি। ঘর থেকে বিনা কারণে কেউ বেড় হলে তাকে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে। এ সবই করা হচ্ছে দেশবাসীকে সুরক্ষা দানেরই জন্য। কেননা আমাদের পাশর্^বর্তী দেশে এ সময়ে প্রতিদিনই লক্ষ্যাধিক মানুষ এই করোনায় প্রাণ হাড়াচ্ছে। তাই সাবধান না হলে আমাদের দশাও এই একই হবে।

২৪। ২৯ এপ্রিল-৫ মে, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ ২৯ এপ্রিল -৫ মে পর্যন্ত কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও এসএমআরএ সিস্টারদের জন্য মেরী হাউজে ২য় দলে বাৎসরিক নির্জন ধ্যান সার্থক ভাবেই সমাপ্ত করেন। এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন সর্বমোট ৪৮ জন সিস্টার। সবাই সুস্থ ও সুন্দরভাবেই নির্জন ধ্যানে অংশ নিলেও সিস্টার থিওডোরা তিন দিন পর হতে জ¦রে ভুগেছেন। ঈশ^রের দয়ায় দু’ দিন বৃষ্টি হওয়াতে পরিবেশও খুবই ভাল ছিল।

২৫। ৭ মে, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ তুমিলিয়াতে আমাদের নার্সিং স্কুলের বিল্ডিং এর কাজ শুরু হয়। আর্চ বিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুশ, শ্রদ্ধেয়া সিস্টার মেরী মিনতি, সুপিরিওর জেনারেল, সিস্টার শিখা, সিস্টার দীপ্তি এ উদ্দেশ্যে সকালে তুমিলিয়াতে যান। যাবার পূর্বে মেরী হাউজে সিস্টার সবাইকে তা জানিয়েছেন এবং আমাদের সবার কাছে প্রার্থনার জন্য অনুরোধ করেছেন। যেন এই বিল্ডিং তৈরীর কাজ সার্থক ভাবে সম্পন্ন হয়। আমরাও সিস্টারকে প্রার্থনা করবো বলে আশ^াস দিয়েছি।

২৬। ৭ মে – ১৪ মে, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল (সিস্টার মেরী মিনতি, এসএমআরএ) রাঙ্গামাটিয়া আমাদের কনভেন্টে থেকে বাৎসরিক নির্জন ধ্যান সাধনা করবেন। তাই তিনি তুমিলিয়ার নাসিং স্কুলের কাজ শেষ করে রাঙ্গামাটিয়া যান এবং নির্জন শেষ করে তিনি ১৪ মে মেরী হাইজে ফিরে আসেন।

২৭। ১২ মে, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ আন্তর্জাতিক সেবিকা দিবস। আজকের এই দিনে আমাদের প্রার্থনায় সকল নার্সদের স্মরণে প্রার্থনা করা হয়েছে। বিশেষভাবে মেরী হাউজে অবস্থানরত নার্স ভগ্নীদের সবাইকে খ্রিস্টযাগের পর পর ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এই দিনে তারা তাদের প্রতিজ্ঞাবাণী উচ্চারণ করেন এবং নার্সিং সেবার উপর একটি চমৎকার সমবেত সঙ্গিত পরিবেশন করেন। তারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এই নার্সিং পেশাকে তারা তাদের জীবনে নেশা হিসাবেই গ্রহণ করেছেন। তাই তারা অসুস্থদের সেবায় সদা তৎপর।

২৮। ১৯ মে, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

সারা সংঘে আজ যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে মাদার আগ্নেশের জন্ম শতবর্ষ উদ্যাপন করা হয়েছে । সকালে বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে মাদারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য প্রদান করা হয়। এর পর বিশপ থিওটনিয়াস গমেজ সকাল ৬:০০ ঘটিকায় মেরী হাউজের চ্যাপিলে মাদারকে উপলক্ষ্য করে খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন। তিনি মাদারের অনেক গুনাবলীর কথা বলেন। তিনি বলেন যে মাদার তার সমস্ত কিছুকে অর্থাৎ দেহ, মন ও আত্মাকে গুটিয়ে এনে ছিলেন। তিনি আধ্যাত্মিকতায় পরিপূর্ণ ছিলেন। ঈশ^র, মানুষ ও প্রকৃতিকে তিনি অনেক ভালবেসেছেন।

খ্রিস্টযাগের পর মাদারের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষ্যে কেক কাটার অনুষ্ঠান হয়। বিকেল চারটায় আমরা সবাই মেরী হাউজ থেকে মাদারের বাধাঁনো ছবি নিয়ে শোভাযাত্রা করে, মালা প্রার্থনা ও গান গেয়ে প্রথমে বটমলী হোম অর্ফানেজের হলরোমে যাই। সেখানে অনাথ শিশুরা বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে এবং মাদার যা করতেন অর্থাৎ মাদারের কাজকর্ম, পরিচালনা তিনি ভোবে করতেন তা অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করে। সেই সাথে সিস্টার মেরী দীপ্তি ও সিস্টার মেরী প্রতিভা মাদারের বিষয়ে সহভাগিতা রাখেন। সিস্টার জেনারেলও মাদারের জীবন মেয়েদের সামনে তুলে ধরেন।

মাদারের মত হতে তিনি মেয়েদের অনুপ্রাণীত করেন। অতপর আমরা সবাই মাদারের ঘরে যাই। যেখানে তিনি থাকতেন, যেসব জিনিস তিনি ব্যবহার করতেন তা সুন্দরভাবেই সাজানো ছিল। আমরা সেখানেও মাদারকে স্মরণ করে প্রার্থনা করি এবং এরপর সবাই একসাথে সেখানে টিফিন করি ও এভাবেই আমরা অনেক আনন্দ করি। রাতে খাবারের পর মাদারের জীবনীর উপর ভিত্তি করে নাটিকা (মাদার আসলে কে?) উপস্থাপন করেন আমাদের এসপাইরেন্ট বোনেরা। পরিচালনায় ছিলেন সিস্টার মেরী চন্দ্রা, এসএমআরএ।

২৯। ২২ মে, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 প্রেরিতগণের রাণী মারীয়ার সঙ্গিনী সংঘের প্রতিপালিকার পর্ব ঃ সংঘের প্রতিপালিকা রাণী মায়ের পর্ব উপলক্ষ্যে সারা সংঘে ১৩-২১ মে অর্থাৎ পূর্ববর্তী ৯ দিন নভেনা করা হয় এবং এরই মধ্য দিয়ে পর্বের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। মেরী হাউজে যে চারটি দল রয়েছে সেই দলগুলি ২ দিন করে নভেনার দায়িত্ব নিয়েছেন। পর্বের পূর্ব সন্ধ্যায় বিশেষ পবিত্র ঘন্টা ও ভিজিল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল এবং এর দায়িত্বে ছিল ১ম দল। পর্বদিনে প্রাত:কালীন প্রার্থনা ও ধ্যান পরিচালনায় ছিলেন উপাসনা কমিটির পক্ষে সিস্টার মেরী মিতালী, এসএমআরএ এবং একই দিনে তেজগাঁও গির্জায় ও ঘরে খ্রিস্টযাগে গান পরিচালনা করেছেন মেরী হাউজের উপাসনা কমিটি।

দায়িত্বে সিস্টার মেরী মিতালী, এসএমআরএ। সংঘের মধ্য দিয়ে আমাদের সিস্টারগণ যে মন্ডলীতে সুন্দর সেবাকাজ কওে যাচ্ছেন তারজন্য গীর্জাতে শ্রদ্ধেয় বড় ফাদার সংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি গির্জাঘরে সিস্টারগণ সুন্দর করে বেদী সাজান বলেও সিস্টারদের প্রশংসা করেন। এরপর বটমলী হোম, জাগরণী ও মেরী হাউজের ভগ্নীগণ একত্রে মেরী হাউজে পর্বীয় শুভেচ্ছা বিনিময় ও সকালের নাস্তাতে অংশগ্রহণ করি। সকাল ১১:৩০ মিনিটে ছিল পুনরায় চ্যাপিলে পর্বীয় খ্রিস্টযাগের আয়োজন। বিশপ হাউজ থেকে শ্রদ্ধেয় ফাদার মিল্টন রোজারিও এই খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন। দুপুরের পর্বীয় প্রীতিভোজে নিমন্ত্রিত ছিলেন তেজগাঁও প্যারিশের ও বিশপ হাউজের ফাদারগণ এবং কাফরুল প্যারিশ হতে ফাদার যাকোব। বিশেষ কোন কারণে ফাদার যাকোব আসতে পারেননি। দিনটি সব দিক থেকে খুব আনন্দেই আমরা অতিক্রম করেছি। ঈশ^রকে ধন্যবাদ।

৩০। ২৬ মে- ১ জুন, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

মেরী হাউজে ৩য় দলে ৪৮ জন এসএমআরএ সিস্টার খুবই শান্তিপূর্ণ ও নীরব পরিবেশে তাদের বার্ষিক নির্জন ধ্যান সাধনা সমাপ্ত করেন। আগমন করেছিলেন ২৬ মে এবং নির্জন শেষ করে তারা প্রস্থান করেন ২ জুন, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ। পরিচালক ছিলেন মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও।৩০ মে, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ ঃ আমাদের অগ্রজা ভগ্নী সিস্টার মেরী মিরিয়াম আজ ৩০ মে, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষে তুমিলিয়া সেন্ট মেরীস কনভেন্টের শান্তি ভবন থেকে পরম পিতার শেষ ডাকে সাড়াদান করে ইহধাম থেকে চিরদিনের তরে বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বৎসর, ১মাস ২০ দিন। তিনি ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের রাণীখং ধর্মপল্লীর অধিনে মাধবপুর গ্রামে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টবর্ষে ৬ জানুয়ারী সংঘে প্রবশ করেছিলেন এবং ১৯৫৪ খ্রিস্টবর্ষে তিনি ১ম ও ১৯৬০ িিখ্রস্টবর্ষে তিনি শেষ ব্রত গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭৯ খ্রিস্টবর্ষে তিনি রজত জয়ন্তী ও ২০১৪ খ্রিস্টবর্ষে তিনি সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব পালন করেছিলেন। তিনি একজন আদর্শ সেবিকা বটে। তাছাড়া তিনি নীরবকর্মী, জনদরদী, ত্যাগময়ী, সদা হাস্যোজ্জল, মৃদুভাষী স্নেহকোমল প্রাণা একজন ভগ্নী ছিলেন। তার প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। প্রার্থনা করি পরম পিতা তাকে যেন তার ভালকাজের পুরস্কারÑ স্বর্গসুখ দান করেন।

৩১। ৩ জুন, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ মেরী হাউজে সংঘের পক্ষে শ্রদ্ধেয় বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। কেননা তিনি ২০১৬ খ্রি. থেকে অদ্যাবধী ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশে তথাপি আমাদের সংঘে বিভিন্নভাবে সেবাদান করেছেন। এখন তিনি সিলেট ধর্মপ্রদেশে মেষপালকের দায়িত্ব নিয়ে চলে যাবেন ২ জুলাই। তাই উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মেরীহাউজে তাকে নিন্ত্রণ জানানো হয়। বিশপ মহোদয়ের জন্য সন্ধ্যা ৬:০০Ñ৭:০০ বিশেষ পবিত্র ঘন্টা করা হয়। এরপর খাবার ঘরে উনাকে উপলক্ষ্য করে ছোটখাট একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয় এবং এরই মধ্য দিয়ে তার প্রতি র্কতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় । তিনি সিলেটে তিনটি আশ্রমে কর্মরত সিস্টারদেরকে যত্ন নিতে শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়কে বিনিত ভাবে অনুরোধ করেন। এরপর বিশপ মহোদয়ও তার বক্তব্যে সংঘের সিস্টারদের আন্তরিক সেবাকাজের প্রশংসা করেন। ধন্যবাদ দেন সকল সিস্টারগণকে। শেষে প্রীতিভোজের মাধ্যমে আজকের এই অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হয়।

৩২। ৫-১১ মে, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

সংঘে ৪র্থ দলে অংশগ্রহণকারী সিস্টারগণ তাদের বার্ষিক নির্জন ধ্যান সাধনা শুরু করেন ৫ মে এবং সমাপ্ত করেন ১১ মে। পরিচালনা করেন মহামান্য কার্ডিনার প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও। উল্লেখ্য যে তিনি এসএমআরএ পরিবারের সিস্টারদের জন্য এ বৎসর পর পর ৪টি দলে নির্জন ধ্যান পরিচালনা করেন। তার পরিচালনা খুবই চমৎকার ছিল। ভগ্নিগণ এই আধ্যাত্মিক অনুশীলনে অনেক লাভবান হয়েছেন।

৩৩। ১৬ জুন, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

মেরী হাউজে আজ দাদা-দিদিদের পর্ব পালন করা হয়। দিনটিকে আনন্দময় করে তুলার জন্য তাদেরকে সারাদিনের জন্য ছুটি দেয়া হয়। সবাই সকালে খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন। এরপর চ্যাপিলের চত্তরে তাদেরকে গান গেয়ে, ফুল ও উপহার প্রদান করা হয়। সিস্টার জেনারেল তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে পিতা, পুত্র ও পবিত্রআত্মা ঈশ^র তারা প্রত্যেকেই কাজ করেন। পিতা ঈশ^র সৃষ্টি করেন, পুত্র মুক্তি সাধন করেন এবং পবিত্র আত্মাও সকল মানুষকে পরিচালিত করেন। সুতরাং তোমরাও আমাদের মাঝে রয়েছ এবং আমাদের সাহায্য করছো বলে সিস্টারগণ বিভিন্ন স্কুল কলেজে, অফিস আদালতে কাজে যেতে পারছেন। আমরা এভাবেই পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক হয়ে থাকি। আজকের এই দিনে আমরা তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তোমাদের ও তোমাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করি। সবাই ভাল থেকো। আজকের এই দিনে মেয়েদেরকে ছুটি দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিস্টারগণ পালা পালা করে রান্না করেন।

৩৪। ২৮ জুন, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 ঢাকা জেলা প্রশাসক আজ ২৮ জুন বিকাল ৫:৩০ মিনিটে মেরী হাউজে আসেন। তার নাম হল Ñমোঃ শহিদুল ইসলাম। তিনি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা। এই দিনে উনার সাথে ছিলেন ঢাকার আর্চ বিশপ, বিশপ বিজয় এন ডি ক্রুশ, ওএমআই, বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, ফাদার সুব্রত গমেজ, ফাদার কমল কোড়াইয়া, এম পি. Ñ ও আরও কিছু গণ্যমান্য লোক। প্রথমে তারা মেরী হাউজ পরিদর্শন করেন। মেরী হাউজে উনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানান মেরী হাউজের সিস্টারগণ। উনার কাছে আমাদের একটি সমস্যা তুলে ধরা হয়। তা হল মেরী হাউজের টেক্স অতিরিক্ত হওয়াতে তা কিছুটা হলেও যেন মওকুফ করা হয় তার জন্য আবেদন। এর পর তারা জাগরণীতে যায়। সেখানেও উনাকে জাগরণীর মেয়েরা গান গেয়ে ফুল ও উপহার দিয়ে অভিনন্দন জানান। এর পর তারা সব দেখে সেখানে চা খান। জাগরণীর মেয়েদের চলাচলের সুবিধার্থে যে তেমন কোন রাস্তা ও গেট নেই- এই বিষয়টি তাকে জানানো হয়। সব শেষে বটমলী হোম অর্ফানেজে যান। সেখানেও ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে নেচে গেয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি িিশশুদের কার্যক্রম দেখে আনন্দিত হন।

৩৫। সারা দেশে লকডাঊন :

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার সারা দেশে ২৮ জুন থেকে কঠোর লকডাউন পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এসময়ে সব ধরণের সরকারী-বেসরকারী অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরী পণ্যবাহী ছাড়া সব ধরনের গাড়ী ও যান চলাচলও বন্ধ থাকবে। শুধু মাত্র এ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতে ঘরের বাইরে বের না হতে পারেন সেইজন্য কঠোর লকডাউন পালন করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার। গতকাল ২৫ জুন, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ দেশে মোট ১০৮ জন করোনা মহামারির কারণে মারা গিয়েছেন। এটি দেশে করোনায় একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ মৃত্যু। এই পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৬ জনের। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৬৯ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৪ জনে। গত ১৮ এপ্রিল ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর আগে ১৯ এপ্রিল দেশে একদিনে সর্বোচ্ছ ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

৩৬। ১ জুলাই, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ থকে সারা দেশে লকডাউন চলছে। এসময় সবাইকে ঘরে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। বিনা কারণে কেউ বাইরে গেলে তাকে জবাবদিহিতা করতে হবে। তার নামে মামলা করা হবে অথবা এমনকি তাকে জেলও খাটতে হতে পারে। সুতরাং লকডাউন বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক করা হয়। এই সময়ে সিস্টার জেনারেল বলেন আমরা যেন বেশী বেশী প্রার্থনা করি যেন করোনা মহামারি থেকে দেশবাসী তথা সারা বিশে^র মানুষ সুরক্ষা লাভ করে। এই উদ্দেশ্যে সকাল ৮:০০- দুপুর ১:০০ পর্যন্ত সাক্রামেন্তের আরাধনা করা হয়। এতে সিস্টারগণ পালা করে চ্যাপিলে সাক্রামেন্তের সামনে থেকে বিশেষ প্রার্থনা করেন যেন করোনা মহামারি পৃথিবী থেকে দূরীভূত হয়।

৩৭। ৮ জুলাই, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

প্রার্থী গ্রহণ Ñ সংঘে ৮ জন প্রার্থীকে আজ মেরী হাউজে বরণ করে নেয়া হয়। তারা দু’ বৎসর এসপাইরেন্সী কাল শেষ করেছেন এবং এসময়ে তারা কলেজে পড়াশুনা করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে তারা খুব বেশী কলেজে যেতে পারেনি। সবাই অটোপ্রমোশনে পাশ করবে বলে সরকার জানিয়েছেন। দীর্ঘ আট বৎসর পর আমরা সংঘে আটজন প্রার্থী পেয়ে সবাই খুশী, ঈশ^রকে ধন্যবাদ জানাই এবং তাদের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করবো বলে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যাদেরকে প্রার্থী হিসাবে সংঘে বরণ করে নেয়া হয়েছে তারা হলেন Ñ
১। রিমঝিম ষ্টেল্লা রোজারিও Ñ সাবার, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ
২। প্রীতি বিশ^াস Ñমালপাহাড়ী, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ
৩। হলিকুইন তেরেজা তংপেন Ñ খাসিয়া, সিলেট ধর্মপ্রদেশ
৪। মিলিতা হেমব্রম (রীতা) Ñ বিনিদুয়ার মিশন, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ
৫। মেঘলা রোজারিও Ñ রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লী, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ
৬। অন্তরা তেরেজা গমেজÑ নাগরী ধর্মপল্লী, ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশ
৭। ইভা লিনা শূয় Ñ খাসিয়া পুঞ্জি, সিলেট ধর্মপ্রদেশ
৮। রুণা বিশ^াস Ñ মালপাহাড়ী, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ

৩৮। ১৭ জুলাই, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

রজত জয়ন্তী উৎসব পালন ঃ আজ ১৬ জুলাই ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ, মেরী হাউজ পরিবারে ৬ জন সিস্টারের রজত জয়ন্তী উৎসব উদ্যাপন করা হয়। অর্থাৎ গত ৬ জানুয়ারী সংঘে সিস্টারস চামেলী, লিউবা, অর্পা, ষ্টেল্লা, পিউসা ও সিস্টার মারীষ্টেল্লা – এই ছয় জন ভগ্নীর জন্য খুব ঘটা করে ব্রতীয় জীবনের ২৫ টি বৎসরের স্মরণে রজত জয়ন্তী উৎসব উদ্যাপন করা হয়েছিল। কিন্তু ঐশ পরিকল্পনায় সে সময়ে সিস্টার ষ্টেল্লা ইটালী থেকে আসতে পারেনি এবং সিস্টার মারীষ্টেল্লা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ফলে সে সময়ে তারা জুবিলী উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সিস্টার ষ্টেল্লা ইটালী থেকে এসেছেন এবং সিস্টার মারীষ্টেল্লাও এখন সুস্থ। তাই এ সময়ে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বাকী চারজনকে সহ আমরা সবাই আজ জুবিলী উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছি। উৎসবের পূর্বদিন যথারীতি বিশেষ পবিত্র ঘন্টার মাধ্যমে উৎসবকারী ভগ্নীদের জন্য মঙ্গল কামনা করা হয় এবং এর পর সিস্টারগণকে ভিজিল উৎসবের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়।

সকালে প্রাত: ধ্যান, শুভেচ্ছা জ্ঞাপন এবং ১১:৩০ মিনিটে বিগত ২৫টি বৎসরের জন্য ঈশ^রকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খুবই অর্থপূর্ণ খ্রিস্টযাগ তাদের উদ্দেশ্যে অর্পণ করেন আমাদের পালপুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার সুব্রত বনিফাস গমেজ। এমনি একটি পবিত্র, নিবেদিত জীবনে সিস্টারগণ যে আহ্বান পেয়ে সাড়াদান করেছেন এবং বিশ^স্তভাবে বিগত ২৫টি বৎসর অতিক্রম করেছেন তারজন্য তিনি প্রথমত ঈশ^রকে ধন্যবাদ জানান এবং উৎসবকারী সিস্টারগণকে অভিনন্দন জানান। সেইসাথে সিস্টারগণ যে তাদের সুন্দর মন নিয়ে মন্ডলীতে, সংঘে তথা দেশে-বিদেশে নি:স্বার্থ সেবা দান করছেন (একজন ডাক্তার, নার্স, শিক্ষকা হিসাবে) তার জন্য তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শ্রদ্ধেয় ফাদার বলেনÑ এখন আরও উত্তম সময় সামনে রয়েছে, আপনারা আরও উদার হয়ে সংঘের মাধ্যমে মন্ডলী তথা ঐশরাজ্য বিস্তারের কাজকে আরও দ্রুত সামনের দিকে এগিয় নিয়ে যাবেন, আপনাদের কাছে আমরা সেই প্রত্যাশা রাখি। পবিত্র খ্রিস্টযাগে উৎসবকারী ভগ্নীদের সবার জন্যই বিশেষ প্রার্থনা ও আর্শীবাদ করা হয়। অতপর বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠন, উপহার প্রদান ও প্রীতিভোজের মাধ্যমে এই উৎসবের সমাপ্তি হয়।

৩৯। ১৯ জুলাই, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

সিস্টার মেরী সহায় মৃত্যু বরণ করেন ঃ আজ সকাল ৮:৩০ মিনিটে মাতৃগৃহ থেকে আমাদের শ্রদ্ধেয়াা সিস্টার মেরী সহায়, এসএমআরএ স্বর্গীয় পিতার শেষ ডাকে সাড়াদান করে ইহধাম ত্যাগ করেছেন। তিনি বিগত কয়েক বৎসর ধরেই বার্ধক্য জনীত কারণে অসুস্থ ছিলেন। তার মাথায় যন্ত্রনা ছিল। শেষ দিকের কয়েক দিন তিনি জ¦রেও ভুগেছেন এবং শেষে দেহের অক্সিজেন কমে আসছিল। আর এভাবেই তিনি আমাদের সকলকে ছেড়ে পর পারে পাড়ি জমিয়েছেন। আমরা তার বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করি।

সিস্টার সহায় একজন আদর্শ শিক্ষিকা ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে তিনি এমএ. ডিগ্রী লাভ করেন। আর বাংলা বিষয়েই তিনি হাইস্কুলে শিক্ষা দান করতেন। তিনি পুষ্প সংঘের কাজ খুব সুন্দরভাবে পরিচালনা করতেন। তিনি ছাত্রীদেরকে অনেক ভালবাসতেন এবং সব সময় তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। তিনি একজন নীরব কর্মী ছিলেন। আমরা তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করি।

৪০। ১ আগষ্ট, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

সিস্টার মেরী যশোময়ী মৃত্যু বরণ করেন ঃ আজ দুপুর ১২:১৫ মিনিটে মাতৃগৃহের শান্তিভবন থেকে আমাদের শ্রদ্ধেয়া সিস্টার মেরী যশোময়ী, এসএমআরএ স্বর্গীয় পিতার শেষ ডাকে সাড়া দিয়ে তিনিও অনন্তকালীন বিশ্রামাগাে চলে যান। বার্ধক্য জনীত কারণেই তিনি ইহধাম ত্যাগ করেচেন। তিনি জীবন কালে একজন উত্তম নার্স হিসাবে সংঘে ও মন্ডলীতে অত্যন্ত নি:স্বার্থ সেবা দান করেছেন। আমরা তার বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করি।

৪১। ৯ আগষ্ট, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ বিশপ আদিবাসী দিবস। আজকের এই দিনে আমাদের সংঘের আদিবাসী ভগ্নীদেরকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুভেচ্ছা প্রদান করা হয় । শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল সবাইকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন যে সংঘ সবার জন্য। সবাইকেই সমানভাবে দেখা হয়। কোন কিছু ভেদাভেদ নেই। আজকের এই আদিবাসী দিবসে আমি সকল আদিবাসী ভাইবোনদের জন্য শুভ ও মঙ্গল কামনা করি। বিশেষভাবে আমাদের সংঘে যে ভগ্নীগণ রয়েছেন তাদের জন্য আমার বিশেষ প্রার্থনা ও আর্শীবাদ রইল।

৪২। ১৬ আগষ্ট, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ সংঘের প্রতিটি আশ্রমে সহ-স্থাপনকর্ত্রী মা শ্রদ্ধেয়া সিস্টার রোজবার্ণর্ডের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। এ দিনে সিস্টারের বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা ও স্মৃতিচারণ করা হয়। উনার প্রতিকৃতিতে ফুলের মালা প্রদান ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। শেষ গনের সময় সবাই সামনে গিয়ে তার কাছ থেকে আর্শীবাদ গ্রহণ করেন।

৪৩। ১৭ আগষ্ট, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজকের এই দিনে ১৯৪৪ খ্রিস্টবর্ষে আমাদের সংঘ পন্টিফিকাল সোসাইটি হতে একটি দেশীয় সংঘরূপে প্রতিষ্ঠা লাভের স্বীকৃতি লাভ করে। নমস্য বিশপ তিমথী জন ক্রাউলীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল হল সংঘের এই প্রতিষ্ঠা লাভ। আমরা ঈশ^রকে ধন্যবাদ জানাই যে এসএমআরএ সংঘ প্রতিষ্ঠা লাভের পর আজ সুদীর্ঘ ৮৫ বৎসর অতিক্রম করার সুযোগ তিনি আমাদেরকে দান করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি পরম শ্রদ্ধেয় বিশপের তিমথি জন ক্রাউলীর কাছে। তিনি আমাদের ভালবেসে সংঘ প্রতিষ্ঠালাভের জন্য যা কিছু প্রয়োজন ছিল তার সবই তিনি সম্পন্ন করেছেন। ঈশ^র তাকে চির শান্তি দান করুন। আজকের এই বিশেষ দিনে শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল ও তার মন্ত্রীণিগণ মাতৃগৃহে যান এবং সেখানে তিনি সবার সাথে একত্রিত হন। পরদিন তিনি একটি মিটিং করেন আমাদের নার্সিং স্কুলের জন্য এবং মেরী হাউজে ফিরে আসেন।

৪৪। ১৯ আগষ্ট, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 ১৯- ২০ আগষ্ট মেরী হাউজে সংঘের সকল কর্ত্রীপক্ষদের নিয়ে মিটিং করেন শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল।

৪৫। ২০ আগষ্ট, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ ঃ সিস্টার মেরী দিপালী পাবলীকেশন পরীক্ষায় কৃতকার্য়তা লাভ করেছেন। সংঘের পক্ষ হতে সিস্টার দিপালীকে ফুল ও জ¦লন্ত প্রদীপ দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়। তিনি বর্তমানে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে একজন মেট্রন হিসাবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেবা দান করছেন।

৪৬। ২১ আগষ্ট, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ সংঘের সহ প্রতিষ্ঠাত্রী সিস্টার মেরী রোজ বার্ণার্ডের পর্বদিন যথাযথ মর্যদার সাথে মেরী হাউজে পালন করা হয়।

৪৭। ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ পোপ ফ্রান্সিসের সাথে একাত্ম হয়ে মেরী হাউজে ভগ্নীগণ প্রকৃতি সুরক্ষায় আশ্রমে সিস্টার মিতালী বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে। উদ্দেশ্য আমরা সবাই যেন সচেতনভাবেই প্রকৃতির যত্ন ও তার সুরক্ষায় এগিয়ে আসি এবং এই প্রার্থনা সপ্তাহব্যাপী করা হয়। তাছাড়া বাড়ির আঙ্গিনা, আশপাশ পরিস্কার করা হয়। গাছ লাগানো ও তার যত্নও নেয়া হয়। গ্যাস, লাইট, পানি, নীল, সাবান ব্যবহারে ভগ্নীগন আরও সচেতন হয়ে উঠেন।

৪৮। ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 ৪ বৎসর পর বিগত ১৬ মার্চ সিস্টার জেনেট সুদূর ইটালী হতে দেশে এসেছিলেন এবং আজ সিস্টার মেরী জেনেট ৭ মাস পর পুনরায় তার কর্মস্থল ইটালীতে ফিরে যান। উল্লেখ্য যে তিনি মাত্র ২ মাসের ছুটিতে এলেও করোনা মহামারী ও লকডাউনের কারনে তিনি যেতে পারেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি পূর্বের চেয়ে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক থাকাতে তিনি ফিরে যেতে পেরেছেন নীরাপদে। দয়াময় ঈশ^রকে অশেষ ধন্যবাদ।

৪৯। ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 সিস্টার মেরী ষ্টেল্লা, এসএমআরএ তার ২৫ বৎসরের রজত জয়ন্তীতে দেশে আসতে পারেনি। তাই তিনিও দেশে এসেছিলেন। মেরী হাউজে তার জন্য পুনরায় এই উৎসব করা হয়। তিনি ছুটি করে আজ ইটালীতে ফিরে যান। দু’জনের যাত্রাই ভাল ছিল।

৫০। ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 ২০২০-২০২১ খ্রি. পুণ্যপিতা পোপ মহোদয়ের নির্দেশ ক্রমে আমরা মন্ডলীতে পালন করেছি সাধু যোসেফ বর্ষ । এই সময়ে আমাদের সিস্টার মেরী প্রশান্ত, এসএমআরএ “যোসেফের কাছে যাও” নামে একটি বই রচনা করেন এবং তা আজ উদ্বোধন করা হয় তেজগাঁও ধর্মপল্লীর কমিউনিটি হলে। অনেক ভক্তজনগণ এবং আমাদের সিস্টারগণ এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। তার লেখা বইটি খুবই চমৎকার হয়েছে। তিনি উদারভাবে আমাদের মেরী হাউজে সবাইকেই এই বইটি উপহার দিয়েছেন। এতে আমরা সবাই খুব খুশী হয়েছি। সিস্টারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। প্রার্থনা করি তিনি যেন এমনিভাবে সংঘে ও মন্ডলীতে আরও অনেক অবদান রাখতে পারেন।

৫১। ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল ও সি. শিখা মাতৃগৃহে যান আমাদের নার্সিং স্কুলের জন্য মিটিং করতে এবং পর দিন ২২ তারিখে উনারা নীরাপদে মেরী হাউজে ফিরে আসেন। ঈশ^রকে ধন্যবাদ।

৫২। ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 বিশেষ ত্রি-দিবসীক প্রার্থনার পর আজ ঘরোয়াভাবে মেরী হাউজে সিস্টারদের পর্ব পালন করা হয়। পর্বীয় খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার হেমন্ত রোজারীও,সিএসসি এবং রাতে খাবার পর এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন আমাদেও এ্যাসপাইরেন্ট ও সিস্টারগণ।

৫৩। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ সিস্টার জেনারেল ও সিস্টার শিখা চট্টগ্রাম যান এবং সেখানে আমাদের তিনটি আশ্রম পরিদর্শণ করেন। সিস্টারগণ ১লা অক্টোবর মেরী হাউজে ফিরে আসেন।

৫৪। ১ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ সিস্টার মেরী ফ্রান্সিস্কা পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে সেই অনন্তধামে, না ফেরার দেশে চলে যান। সকাল থেকেই সিস্টারের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়াতে ফাদার ডেকে তাকে অন্তিমলেপন দেয়া হয়। অতপর হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু তাকে আর রাখা যায়নি। দুপুর ২:০০টা নাগাদ তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন। তাকে মেরী হাউজে আনা হয় এবং সন্ধ্যায় সিস্টারের উদ্দেশ্যে খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করা হয়। সাড়া রাত তিনি এম্বুলেন্সে মেরী হাউজের চ্যাপিলের সামনে বারান্দায় ছিলেন এবং পরদিন সকালে তাকে প্রথমে তার নিজ বাড়িতে তার মার কাছে নেয়া হয়। তারপর সিস্টারকে তুমিলিয়াতে নেয়া হয় এবং সেখানেই পুনরায় খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে আমাদের নিজস্ব: কবরে তাকে চিরদিনের মত শায়িত করেন। তিনি আছেন পরম পিতার সান্নিধ্যে চির শান্তির দেশে। আমরা তার বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করি।

৫৫। ০৫ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ বিশপ শিক্ষক দিবসে মেরী হাউজে আমাদের সকল শিক্ষিকা ভগ্নীদেরকে ফুল ও গানের মধ্য দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়। অতপর শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল এই দিবসটির মাহাত্ম সবার জন্য তুলে ধরেন। সব শেষে শিক্ষিকা ভগিনীদের মধ্য থেকে দু’জন ভগ্নী এই শিক্ষিকা দিবসে একজন শিক্ষক হিসাবে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

৫৬। ১৪ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 চ্যাপটার কমিটির মিটিং করার জন্য মিটিং এ অংশগ্রহণকারী ভগ্নীগণ বিভিন্ন আশ্রম হতে মেরী হাউজে আসেন। শ্রদ্ধেয় ফাদার আদম এই মিটিং পরিচালনায় সহায়তা প্রদান করেন। মিটিং শেষ করে ভগ্নীগণ ১৭ অক্টোবর নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যান।

৫৭। ৩০ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ মেরী হাউজ পরিবার তীর্থ করার জন্য শুলপুর সাধু যোসেফের ধর্মপল্লীতে যান। সেখানে পাপস্বীকার, উপদেশ, দন্ডমোচন ও খ্রিস্টযাগে ভগ্নীগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিকেলে ফিরার পথে মাওয়া দেখতে যান এবং এর পর সন্ধ্যায় মেরী হাউজে নীরাপদে ফিরে আসেন।

৫৭। ৩০ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুশ আজ কাফরুলকে ধর্মপল্লী হিসাবে ঘোষণা দেন। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনরেল, সিস্টার জয়া ও সিস্টার হিমা এবং এই একই দিনে মাদার হাউজে আমাদের নার্সিং স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা নিতে যান সিস্টার দীপ্তি ও সিস্টার শিখা। পরীক্ষা শেষে তারা ঐদিনই মেরী হাউজে ফিরে আসেন।

৫৮। ৩১ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল ও সিস্টার শিখা আজ দরগাচলা যান এবং সেখানে আশ্রম পরিদর্শন শেষ করে ২ নভেম্বর মেরী হাউজে ফিরে আসেন।

৫৯। ৪ নভেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ ৪ নভেম্বর মেরী হাউজে শ্রদ্ধেয়া বড় সিস্টারের পর্ব ঘটা করে পালন করা হয়। জন্মদিনকে কেন্দ্র করে বিশেষ খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার অমল ডি’ ক্রুশ। এই বিশেষ দিনে সিস্টারকে ফুলের মালা ও জ¦লন্ত প্রদীপ দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয় ও কেক কাটা হয়। সিস্টারের মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।

৫৯। ৪ নভেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল সাভার বিসিআর সেন্টারে যান এবং সেখানে তিনি মিটিং শেষ করে বিকালে মেরী হাউজে ফিরে আসেন।

৬০। ১২ নভেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে নার্সিং স্কুল এর ১ম ক্লাশের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হবে। সিস্টার জেনারেলের সুচিন্তিত নির্দেশনা অনুসারে এর তিন পূর্ব হতে অর্থাৎ ১২ নভেম্বর, সন্ধ্যা ৫-৭ পর্যন্ত সংঘের প্রত্যেকটি আশ্রমে বিশেষ পবিত্র ঘন্টা করা হয় যেন নাসিং স্কুলের সকল কার্যক্রমই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হতে পারে। । যীশু নিজেও যে কোন বিশেষ কাজ করার পূর্বে পিতার কাছে এমনিভাবেই সাহায্য প্রার্থনা করতেন।

৬১। ১৫ নভেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ:

 আজ আমাদের এসএমআরএ পরিবারের জন্য আর একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হল। অর্থাৎ বহু প্রত্যাশার পর আজ সংঘে একটি নার্সিং স্কুলের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এতে আমরা সংঘের প্রত্যেক জন ভগ্নীই অনেক আনন্দিত। কেননা এখানে রয়েছে সবারই ত্যাগ, প্রার্থনা ও অনেকেরই আর্থিক অনুদান। ইতিমধ্যে নার্সিং স্কুলের জন্য বান্দাখোলা জায়গা কিনে নতুন বিল্ডিং এর কাজ শুরু করা হয়েছে এবং বর্তমানে কাজও অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছে। যতদিন এই বিল্ডিং শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের তিন তালা বিল্ডিং এ নার্সিং স্কুল চলবে।

বিল্ডিং করা শেষ হলে স্কুল সেখানেই হবে। খুবই আনন্দের বিষয় এই যে এই নার্সিং স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাগণ হলেন আমাদেরই নার্স সিস্টারগণ এবং এই স্কুলের প্রথম প্রিন্সিপাল হলেন সিস্টার মেরী দীপা, এসএমআরএ। এই স্কুরের জন্য অনুমতি পেয়েছে ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করার। তার মধ্যে থাকতে হবে ১০ জন ছেলে। প্রথম বর্ষে এবার স্কুরের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হয়েছে ৩৫ জন (১০ জন ছেলে ও ২৫ জন মেয়ে)। ঈশ^রের মহান দয়ায় সব কিছুই ভালমত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট সত্যিই এর জন্য কৃতজ্ঞ।

৬২। ৩০ নভেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পর সিস্টার মেরী এ্যাঞ্জেলিকা আজ ইটালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। মেরী হাউজ থেকে সন্ধ্যা ৭ টার সময় প্রার্থনা ও আশীর্বাদ প্রদানের পর সিস্টার জেনারেল, দীপ্তি, শিখা, মিতালী ও সিস্টার আলবিনা সিস্টারকে বিমান বন্দরে নিয়ে যান এবং সব কার্যক্রম সমাপ্ত হলে পর আমরা ফিরে আসি রাত এগারটার সময়। সিস্টারের নিরাপদ যাত্রার জন্য আমরা প্রার্থনা করেছি এবং ঈশ^রের মহান কৃপায় তিনি একা যাত্রা করলেও সম্পূর্ণ নিরাপদেই গন্তব্যে গিয়ে পৌছেঁছেন। সিস্টার এ্যাঞ্জেলিকার প্রবাসী জীবনের প্রতিটি দিনেই সর্বশক্তিমান ঈশ^র যেন তার সহায় হন তার জন্য বিশেষ প্রার্থনা করবো। আমরা সিস্টারের সার্বিক কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

৬৩। ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ মেরী হাউজ পরিবারে মহামান্য কার্ডিনালকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা দেরীতে হলেও জানানো হয়। কারণ তার জন্মদিন ৩০ অক্টোবর আমাদের সিস্টার ফ্রান্সিস্কা ইহধাম ত্যাগ করেছেন। তাই সেদিন উৎসবে যোগদান করা সম্ভব হয়নি। তাই আজকের এই দিনে কীর্তন গানের মধ্য দিয়ে কার্ডিনাল মহোদয়কে বড়দিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়।

৬৪। ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ সিস্টার ক্লটিল্ডা দীর্ঘ ৬ বৎসর পর দেশে আসেন পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করার জন্য। তিনি মেরী হাউজে থেকে বিভিন্ন জায়গায় দেখা স্বাক্ষাৎ করছেন এবং বড়দিনে তিনি মাতৃগৃহে থাকবেন। দু’মাস ছুটি করে তিনি পুনরায় ইটালীতে ফিরে যাবেন।

৬৫। ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ কুমারী মারীয়ার অমলোদ্ভবা মহাপর্ব দিনে আমাদের ২ জন ভগ্নী ১ম বারের মত ব্রত গ্রহণ করেন এবং শুভ্র বসনে তাদেরকে ভূষিত করা হয়। এরা হলেন সিস্টার মেরী ফাল্গুনী, এসএমআরাএ, ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ হতে এবং সিস্টার মেরী মল্লিকা, এসএমআরএ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ হতে । তাদের দু’জনের নামের কোন পরিবর্তন হয়নি। তাদের জীবনে এই আত্মোৎসর্গের আনন্দঘন দিনটিতে তাদের পিতামাতা, আত্মীয় স্বজন এবং বিভিন্ন আশ্রম হতে অনেক ফাদার সিস্টারগণ উপস্থিত ছিলেন। মহামান্য কার্ডিনার মহোদয় এই মহতী অনুষ্ঠানে বিশেষ খ্রিস্টযাগ ও ব্রতের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এই একই দিনে আমাদের কয়েকজন সিস্টার এক বৎসরের জন্য ও কয়েক জন তিন বৎসরের জন্য ও আবার কয়েকজন ১ মাসের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির পর ব্রত নবায়ন করেন। সব দিক দিয়ে দিনটি ছিল অত্যন্ত আনন্দ মুখর। সংঘে ঈশ^রের দান হিসেবে আরও দু’জন ভগ্নীকে পেয়েছি বলে আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ^রের ধন্যবাদ ও প্রশংসা করি। প্রার্থনা করি তিনি যেন তাাঁর দ্রাক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য এ সংঘে আরও অনেক মজুর প্রেরণ করেন।

৬৫। ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ শ্রদ্ধেয়া সিস্টার জেনারেল ও শিখা রাণীখং যান এবং সেখান হতে মরীয়মনগর আশ্রম পরিদর্শন করে ঢাকা ফিরেন।

৬৫। ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশ তথা সারা দেশে আমাদের প্রত্যেকটি ধর্মপ্রদেশের ধর্মপল্লীতে একযোগ একই সময়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ ও দেশ স্বধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়েছে। আমাদের তেজগাঁও গীর্জায় পবিত্র খ্রিস্টযাগ অর্পন করেছেন মহামান্য আর্চবিশপ এবং তার সাথে আরও ছিলেন বিশপ পনেন কুবি, সিএসসি, বিশপ শরৎ গমেজ এবং অনেক ফাদার, ব্রাদার, সিস্টারসহ ভক্তজনগণ। খ্রিস্টযাগ শেষে বাইরের চত্তরে জাতিয় সংগীত ও শপথ গ্রহণ করা হয়। দিনটি ছিল অত্যন্ত আনন্দের ও উৎসবমূখর।

৬৬। ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

 আজ বাংলাদেশ মন্ডলী ঢাকা, খামার বারি, কেআইবিতে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বষির্কী ও দেশ স্বধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব পালন করেন রাষ্টীয় পর্যায়ে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি, প্রধান অতিথি ছিলেন এবং মহামান্য কার্ডিনার প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি ‘গেষ্ট অব অনার’ হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। সেই সাথে ছিলেন মাননীয় মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, এমপি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব মো. ফরিদুল হক খান, এমপি, মি. জুয়েল আরেং এমপি, এডভোকে ঝর্ণ গ্লোরিয়া এমপি, সকল বিশপগণ সহ বিপুল পরিমানে ফাদার, সিস্টার, খ্রিস্টভক্তজনগণ ও বিশেষভাবে খ্রিস্টান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধিগণ এখানে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন বক্তাদের বক্তব্য ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়।

৬৭। ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টবর্ষ :

আজ মেরী হাউজে প্রাগ্ বড়দিন উৎসবের আয়োজন করা হয়। আমাদের এ্যাসপাইরেন্ট বোনেরা বাড়িতে যাবে। মূলত তাদেরই জন্য এই উৎসব। তাছাড়া এই একই দিনে আমাদের মেরী হাউজের পক্ষ হতে মন্ত্রীনি ভগ্নিদেরকেও বড়দিনের শুভেচ্ছা ও উপহার প্রদান করা হয় এবং আমাদের দু’জন নূতন সিস্টারকে ( সিস্টারস ফাল্গুনী ও মল্লিকাকে) ফুল ও জ¦লন্ত প্রদীপের মাধ্যমে শুভেচ্ছা অভিনন্দন এই একই সময়ে জানানো হয়। সিস্টার চন্দ্রার পরিচালনায় এ্যাসপাইরেন্ট বোনেরা খুব সুন্দর ও অর্থপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। শেষে সবাই মিলে বড়দিনের কীর্তণ গানে মেতে উঠে।

৬৮। ২৫ ডিসেম্বর :

 আজ প্রভু যীশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব পর্ব অর্থাৎ বড়দিন উৎসব আমরা অনেক আনন্দের সাথেই উদ্যাপন করেছি। আশ্রমের প্রত্যেকজন সদস্যই এবার মেরী হাউজে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষভাবে সিস্টার জেনারেল অন্যান্যবার অন্য আশ্যমে বড়দিন করেন। কিন্তু এবার তিনি আমাদের সঙ্গেই মেরী হাউজে বড়দিন করেছেন। আমরা এতে সত্যিই অনেক আনন্দ পেয়েছি। সকাল ১০ ঘটিকায় বটমলী হোমের সিস্টারগণ মেরী হাউজে আমাদের সঙ্গে বড়দিনের আনন্দ সহভাগিতা করতে আসেন এবং আমাদের সাথে টিফিন করেন।

বিকাল ৪ ঘটিকায় আমরা সবাই বটমলীতে যাই এবং কীর্তন করি হোমের মেয়েদের সাথে। এ সময়ে আমাদের হোস্টেল মেয়েরাও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। এর পর আমরা সবাই এক সাথে কেক, পিঠা, কফি, কমলা ইত্যাদি যার যা পচ্ছন্দ তা খাই এবং অনেক আনন্দ করে ঘরে ফিরি সন্ধ্যায়। আরও অনেক বেশী আনন্দের বিষয় হল আমাদের আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুজ, ফাদারস গাব্রিয়েল কোড়াইয়া, ভিকার জেনারেল, সুব্রত গমেজ, বড় ফাদার ও ফাদার ঝলক আমাদের সাথে নৈশ ভোজে অংশ গ্রহণ করেন এবং বড়দিনের আনন্দ আমরা একসাথে উপভোগ করি।

 আমরা ২০২১ খ্রিস্টবর্ষের জন্য পরম পিতার ধন্যবাদ ও প্রশংসা করি। এই বৎসরটিতে আমরা ঈশ^রের অনুগ্রহ আমাদের জীবনে অনেক পেয়েছি। বসচেয়ে বড় দান হল যে আমরা আজও বেচেঁ আছি। আমরা আমাদের প্রত্যেকের সুন্দর জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি । আশীর্বাদ চাই যেন আগামী নতুন বৎসরটিতেও আমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ লাভ করতে পারি।